সম্পর্কের শুরু যেভাবেই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেটার শুভ পরিণতি পাওয়াই হল আনন্দের। বলা হয়, কে কার জীবনসঙ্গী হবে তা নাকি আগে থেকেই ঈশ্বরের কাছে ঠিক করা থাকে। সে যাইহোক না কেন, বর্তমান যুব সমাজের বেশিরভাগ অংশই চায় নিজের পছন্দের, ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে অর্থাৎ লাভ ম্যারেজ। অনেকের মতে, অচেনা কাউকে বিয়ে করে সারাজীবন অতিবাহিত করা খুব কঠিন কিন্তু, লাভ ম্যারেজে আগে থেকে জানা, চেনার সুযোগ থাকে।
তবুও এখনও অনেক পরিবারেই দেখাশুনা করে, পছন্দ মতো পাত্র, পাত্রীকে বিয়ে করা হয়। কিছুজন পরিবারের পছন্দ মেনে নেন, আবার কিছু জন পিতা-মাতার পছন্দ মানেন না। তারা মনে করেন যে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ তাদের পক্ষে কার্যকর হবে না। তবে, এটাও সম্ভব হতে পারে যে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজেই আপনি আপনার আসল সঙ্গীকে খুঁজে পেলেন, ঠিক যেরকমটা আপনি চাইছিলেন।
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যে যে কারণে ভাল হতে পারে, তার কয়েকটি কারণ আমরা এখানে তালিকাভুক্ত করেছি।
১) সামঞ্জস্যতা থাকে পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের খুব ভাল জানেন, চেনেন। সন্তানের পছন্দ, বিশ্বাস, ভাললাগা, মন্দলাগা সবকিছু সম্পর্কে তাঁরা খবর রাখেন। তাই, পিতা-মাতারা তাদের সন্তানের জন্য পছন্দসই সেরা জীবনসঙ্গীর সন্ধান করেন।
২) পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক করার সময়, দুই পরিবার শুধুমাত্র পাত্র-পাত্রী দেখেন না, পাশাপাশি পারিবারিক সবকিছু দেখেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে, দুই পরিবারের মধ্যে মেলামেশা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, মূল্যবোধ গড়ে ওঠে এবং সংস্কার ও সংস্কৃতির অনেক মিল থাকে। ফলে, পাত্র-পাত্রী এবং দুটি পরিবারের একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব বেশি কষ্ট হয় না। সম্পর্ক গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৩) পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিকাশ হয় অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে উভয় পরিবারই বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে এবং যখন দুটি পরিবার একে অপরের মধ্যে আত্মীয়তা গড়তে সম্মত থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবেই পাত্র-পাত্রী এবং পরিবারের সকলেই প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। কারণ, এখানে পাত্র-পাত্রী ছাড়াও দুটি পরিবারের মান সম্মান জড়িত থাকে। এই বিয়ের ফলে দুটো পরিবারের মানুষ একসঙ্গে তাঁদের আবেগ, অনুভূতি ভাগ করে নেন।
৪) পিতা-মাতার সহায়তা পাওয়া যায় পরিবারের প্রত্যেকের মতামত নিয়ে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়। এর ফলে, পরিবারের সমস্ত সদস্যের মধ্যে আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাত্র-পাত্রীর মধ্যে যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে দুটি পরিবারই এগিয়ে আসে সেই সমস্যার সমাধানে। এই বিয়েতে পরিবারের পাশাপাশি সমাজও পাশে দাঁড়ায়।
৫) নতুন কিছু অন্বেষণ করার সুযোগ দেয় অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে বিবাহের আগে বা বিবাহের প্রথমদিকে পাত্র-পাত্রী একে অপরের সম্পর্কে খুব কমই পরিচিত থাকে। যতদিন যেতে থাকে তারা আস্তে আস্তে একে অপরকে চিনতে পারে এবং নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারে। তাই নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া তাদের মধ্যে আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করে। বিয়ে শুধুমাত্র দু'জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে। পারস্পরিক সম্মান, ভালবাসা, সততা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা, এই উপাদানগুলির মাধ্যমেই বিবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়। নবদম্পতিদের মধ্যে বোঝাপড়া ভাল হলে প্রত্যেক দাম্পত্য জীবনেই সুখ থাকে এবং জীবন হতে পারে আরও মধুময়।